সম্পাদকীয়
৩ বর্ষ. ৬ সংখ্যা. ভাদ্র ১৪০৯. সেপ্টেম্বর ২০০২
দীর্ঘ বিরতির পর আবার পথ চলার উদ্যোগ কিছুটা বিদঘুটে বটে, কিন্তু সে পথ যদি গন্তব্যের পথে হেঁটেচলে তবে তৃপ্তির আনন্দও মধুর। কবিতাপত্র তার অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। এ বিচ্ছিন্নতার যুগে পিঁপড়ের মতো দল বেঁধে চলার চেষ্টাও যেন একটি বিচ্ছিন্ন চিন্তা। ‘মানববিচ্ছিন্নতার ফ্যাশন’ ক্রমশঃ শিল্প-সাহিত্যকে জীবনের কাছ থেকে অনেক দূরে … কল্পলোকের কোন এক আধ্যাত্মিক সত্ত্বার কাছে নিয়ে যাচ্ছে(!) আজকের কবিতারা অচেনা হলদে পাখীর মতো মুহূর্তেই উড়ে চলে যায় আকাশের অসীম নীড়ে …।
কবিতা যদি জীবনের মুকুর হয়, তবে এ জটিল যুগের প্রতিবিম্ব তাকে জটিল করে তুলবে এতে আশ্চর্য কি? জীবনের জটিল জ্যামিতি কবিতাকে দুরূহ করে তুলছে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু দুর্বোধ্য হবে কেন? কবিতা গ্রীষ্মের দুপুরে অতি আকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির ফোঁটার মতো দূর্লভ- অমৃতের স্বাদ, কিন্তু অচেনা কামার্ত-মেঘের সাথে সঙ্গমের অনন্ত অপেক্ষা নয়।
আমরা মধ্যম পথে বিকেলের ছায়ায় রয়েছি
একটি পৃথিবী নষ্ট হ’য়ে গেছে আমাদের আগে;
আরেকটি পৃথিবীর দাবি
স্থির ক’রে নিতে হ’লে লাগে
সকালের আকাশের মতন বয়স;
সে সকাল কখনো আসে না ঘোর, স্বধর্মনিষ্ঠ রাত্রি বিনে।[ বিভিন্ন কোরাস, জীবনানন্দ দাশ ]
প্রত্যাহিক চাল-ডাল-তেলের সাথে সাথে শিল্প-সাহিত্যেও প্রগতি বা অভ্যুত্থান প্রশ্নের সম্মুখীন(?) কিন্তু বাঁধাহীন- আগুনের লকলকে আগ্রাসী বিস্তার। কখনো মানুষের মস্তিষ্কের বিকারকে(অসংলগ্ন, অপ্রয়োজনীয়) পুঁজি করে পণ্যসাহিত্য গিলে খাচ্ছে বোধের সামান্য আলোটুকু আবার কখনো নন্দনতাত্ত্বিক জলজ রেখারা কৃষকের জমির আল ধরে হেঁটে যায় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত নান্দনিক বিছানায়। আমরা লতানো মটরশুটির মতো, বাড়ন্ত কিশোরীকে খেতের আলে বসে দু’দণ্ড জিরিয়ে নেয়ার লোভকে ক’গুন বাড়িয়ে দিতে চাই।
কবিতাপত্র’র এ সংখ্যায় দু’টি গল্প ছাপা হ’লো, যা পাঠক ও নিকটজনদের কাছে প্রথাবিরুদ্ধ মনে হতে পারে। অস্থির, অসংলগ্ন এ সময়ে (অসংখ্য নিঃশ্বাসের শব্দ শোনার, মালা গাঁথার) অনুভূতির আগুনকে উসকে দেয়ার জন্য এটা যৌক্তিক মনে হয়েছে। সাহিত্যের মৌলিক অংকে অহেতুক রেখা টেনে জল কাটার খেলা আকাজ বলেই মনে করি।
শিল্প-সাহিত্য গৃহিণীর নকশি কাঁথায়, পাট কলের সুতোয়, কৃষকের জমির আলে ফিরে যাক …।
০টি মন্তব্য