এতটাও পিপাসার্ত রেখো না
মাহবুবা করিম
আমাকে পিচ্ছিল করে ফেলে দিচ্ছো কোন সুড়ঙ্গে? কোন গুহায়? কোন অতল অজানায় আহত সাবমেরিন জাহাজ সাইসাই ডুবিয়ে দিচ্ছো? অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে, আয়ু গুম হয়ে যাচ্ছে, আমার জবরদস্ত তেষ্টা পাচ্ছে নিধি। ট্যাঙের হলুদ রঙ অনুরূপ তুমি গুলে যাও আমার ভেতর, পর্দার ফাঁক গলে তিলক আলোয় চিনি ও জলের মিশ্রণ যথাঃ গুলে যাও।
গুলে যাও।
আ আ আ আ আ আ গুলে যাও।
এসো এসো এসো অভ্যন্তরে গুলে যাও।
নয়তো,
শহরকে এক্ষুনি দুমড়ে মুচড়ে দলা পাকিয়ে ফেলবো, নয়তো পৃথিবীর তিন ভাগ জল আমি এক ঢোকে গিলে ফেলবো! আমার তেষ্টা মেটাও। ন’মাসি শিশুর মতো লালাসিক্ত চুমু খাও। নিশিত বাদুড়ের ঝাঁক পাখনায় উড়িয়ে নিচ্ছে কামুক রাত, গলির শরীর থেকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে উত্তাপ, আমার ছাতি- জলন্ত গ্যাসের চুলার ‘পরে পুড়ে যাচ্ছে!
এ-মা!
এ কী পুড়ে যাচ্ছে ঘোরতর আগুনে;
তোমাকে ছিঁড়ে ছিবড়ে চুষে খেতে দাও…
আমার এত তেষ্টা পায় কেন?
আমি কী উপোষ,
জল পান করিনি বহুদিন? অভুক্ত ছেঁচড়া কুকুর?মাংসের লোভে লোভে লকলকে ঠোঁটে লেগে থাকা লোলুপ জল?
আমি কী?
আমি কে?
বেহায়া শিরিষ নাকি?
কেন এত তেষ্টায় পাঁজরে পাঁজরে ঠুকাঠোকি?
তোমার সমুদ্রে,
আরও সুমুদ্দুরে তলিয়ে লবনাক্ত হতে দাও, জেলিফিসের মতন আমাকে আরও উলঙ্গ হতে দাও, আমার সব জড়তা মুছে বাদামের কোয়ার মতো খুলে যেতে দাও। সব দেয়াল ভেঙে যাচ্ছে, তোমার পিঠে পিঠ ঠেকাতে দাও। সব মালবাহী ট্রেন রেললাইন মুছে দিচ্ছে ফিরবে না বলে, সব পাহারাদার শহরকে নেঙটো করে শিষ বাজাতে বাজাতে মিলিয়ে যাচ্ছে ভোরের কুয়াশায়
আহ্
দেরি করো না
দেরি করো না
আমাকে তুমুল যুক্তাক্ষরে মিশে যেতে দাও।
আমাকে ডাকো-
আযানের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে দোয়েল ডাকে; পোষমানা দুঃখ ডাকে, মৃত্যু এসে লাফিয়ে পড়ে ঘাড়ের উপর,
ঐভাবেই,
উপুড় হয়ে ঝুঁকে পড়ো আমার উপর,
দেখো তোমার খিল্লি খেয়ে বুকের মধ্যে কেমন হাসছে স্পাইডার লিলি।
দেখো আমি কেমন খুলে ধরেছি বুকের শুকনো জলাশয়…
ঐখানে লালাসিক্ত চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দাও নিধি।
প্রেম হোক অনুরূপ মুসার ধ্যান
তোমার সম্মতি পেলে, আমরা আমাদের তৃষ্ণার ঠোঁটে অফুরান জমজমের জল রেখে পান করতে পারি অমৃত। তোমার সম্মতি পেলে, আমাদের আজন্ম নিলাজ শামুক কফিনজাত আব্রু খুলে প্রজাপতি হয়ে উড়ে যেতে পারে প্রাতঃভ্রমণে। যুগপৎ – তুমি ও আমি আমাদের মোহন নিদ্রা উৎযাপিত হতে পারে পৃথিবীর নরম জাজিমে।
বস্তুতঃ প্রেমই জায়নামাজ ;
আমি প্রেমের উপর দাঁড়িয়ে তোমাকে লক্ষবার উচ্চারণ করি,
অনুমান- ঝিঁঝির জিকিরের চেয়েও মগ্ন আমার ইবাদত,
অনুরূপ – যোগীর অভ্যেসে জিহবায় ভিজিয়ে রাখি
তোমার নাম,
জানবে,
তোমার প্রতি আমার যত ভিখেরীপনা স্বভাবজাত।
আমি ফুল ও ঘাসের অনুশীলনে অচঞ্চল।
আমি তোমার জন্যই মত্ত গাজরের মতন রঙিন বিকেলে। আমি তোমার জন্যই সুখী হাওয়ার তাড়া খেয়ে দ্রুতই যৌবনে গমন করে ফেলি হলুদ ফড়িং অথচ এখনো শিশু। তোমার সিম্ফনি হাসি, আমাকে অনন্ত যৌবনে পদার্পণের জটিল মানসাঙ্কের বৃত্ত ভরাটে ঔদ্ধত্য করে;
আমি তোমার দিকে অগ্রসর হই।
তবু – তোমার নামের দরুদ জানি না বলেই কী
আমার ধ্যান ও মগ্নতা নিতান্ত তুচ্ছ বলে মনে হচ্ছে তোমার।
শূন্যতা
বাবার প্যান্টের পকেটে থাকতো একটি শূন্যতার চুইঙ্গাম;
আমাকে,
আপেল
আঙুর
বেদানা কিনে দিয়ে
পাত থেকে বারবার মাছ তুলে দিয়ে
বাবা এক জীবন চিবিয়েছেন চুইঙ্গাম;
এখন,
বাবার কবরে মুখ রেখে চিৎকার করে বলি,
গত এক সহস্র বছর ধরে আমিও তোমার ফেলে যাওয়া চুইঙ্গাম চিবুই বাবা।
শুনতে পাচ্ছো?
মারাত্মক প্রেমিক
ইদানীং
আপনি ব্যালকনিতে দাঁড়ালেই হলুদ
পর্তুলিকার দেখা পাই ; দোদুল্যমান শিশির
আমিও উদ্যত হই ছুঁয়ে দিতে ;
আমার কী দোষ বলুন?
ফুল যে ছোঁয় না সে কী প্রেমিক, বলুন?
ইদানীং
আপনি পাখির স্নানকক্ষ ভেবে ডুবিয়ে সাঁতার
কেটে যান, থৈ থৈ বাড়ন্ত প্রেমে পালক ফেলে
যান, কিছুটাতো মানবিক হোন –
নিদ্রায় নয়
অশরীরি নয়
স্ব-শরীরে, জীবনের দ্বারে এসে তুলে নিন
আমাকে,
আমিতো বন্যতাই তপস্যা করি। আগুনে পুড়েই সোনা প্রেমিক হতে চাই।
আমাকে অভিজ্ঞ প্রেমিকের মতো আপনার হাসির মুদ্রায় মুদ্রায় লক্ষ-কোটিবার শহীদ হতে দিন।
স্বর্গের দিকে যাচ্ছি না
আমি সেই জান্নাতকে ঘৃণা করি যে অনন্ত
উৎসবে তুমি নেই;
আমি সেই যমালয়কে ভালোবাসি যেখানে মৃত্যুর
হাটঘাট তোমার আঙুল বেঁধে টেনে নিয়ে যাবে
শমনালয়ে, যেখানে
তুমি আছো;
তুমি নেই এইরূপ চুতিয়া পৃথিবীকে ভোগে
পাঠিয়ে আমি জন্মাবো না আর
তুমি নেই মৃত্যুর পরের জীবনে এইরূপ
স্বর্গযাত্রার মিছিলে দাঁড়াবো না আর।
০টি মন্তব্য