ইসমাইল কাদারে’র দশ কবিতা​

ভাষান্তর: আলতাফ শেহাব​


[ইসমাইল কাদারের জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৩৬ সালে, গ্রিস সীমান্তবর্তী আলবেনিয়ার জিরোকাস্তারে। কাদারের মা ছিলেন জিরোকাস্তারের অন্যতম ধনী পরিবারের মেয়ে। কিন্তু বাবা একেবারেই নিম্নবিত্ত পরিবারের, ছিলেন বিচারসভার চিঠিপত্র বহনকারী পিয়ন। কাদারের অসীম ভক্তি ও ভালোবাসা ছিল বাবার প্রতি। ১৯৬০ এর দশকের শুরুতেই ইসমাইল কাদারে কবি হিসেবে বহুল পরিচিত হয়ে ওঠেন। ইয়থফুল ইন্সপিরেশন (১৯৫৩), ড্রিমস (১৯৫৭) ও মাই এইজ (১৯৬১)—তিনটি কবিতার বই সে দেশের সাহিত্যজগতে ও পাঠকসমাজে খুব প্রশংসিত হয়। বিশেষত তরুণসমাজে ব্যাপকভাবে গৃহীত হন কাদারে। 
একজন লেখককে তার লেখার বিষয়ই গড়ে তোলে। বিশেষত, সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবেশ-পরিস্থিতি কোনো সচেতন লেখক এড়াতে পারেন না। কাদারের ব্যক্তিত্বেও রাজনৈতিক প্রভাব ছিল লক্ষনীয়। ১৯৬১ সালে তাঁর রাজনৈতিক সত্ত্বার প্রকাশ দেখা যায়। মস্কো-ফেরত কাদারে এবং আরো কয়েকজন কবির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তাদের আচরণ জাতীয়তাবাদ ও সম্প্রদায় বিরোধী, পশ্চিমঘেঁষা ও অধঃপতিত। এ অভিযোগ রাষ্ট্রের উপর মহল পর্যন্ত পৌঁছালে সভা ডাকা হয়। সমালোচকদের অভিযোগ শুনে এক পর্যায়ে কাদারে ক্রুদ্ধ হয়ে সভা ত্যাগ করেন, তৎকালীন শাসক আনোয়ার হোজ্জা সবাইকে অবাক করে দিয়ে অভিযুক্ত লেখকদের পক্ষ নেয় ও এই বিষয়ে তরুণ লেখকদের মতামত চায়। বিশেষত কাদারের কাছে। কাদারেকে সভায় ফিরিয়ে আনা হলে, তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং সমালোচকদের অসারত্ব তুলে ধরেন। হোজ্জা ততদিনে হয়তো কাদারের নাম শুনে থাকবেন, হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে এরকম লেখক ভবিষ্যতে তার কাজে আসতে পারে। যে দেশে লেখকদের পান থেকে চুন খসলেই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়, সে দেশে কাদারে বা অন্য কেউ আশা করেনি যে হোজ্জা তাদের পক্ষ নেবে। সভায় ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইসমাইল কাদারেকে হিংসুকদের ধরাছোঁয়ার বাইরের একজন করে সমাজতান্ত্রিক লেখক ও বুদ্ধিজীবী সমাজে (intelligentsia) তাঁকে স্থান দেয়া হলো। এতে লেখকসমাজে ও সরকারের কট্টর স্টালিনিস্ট বামপন্থীদের ভেতরে শত্রুও গজিয়ে উঠল। বিশেষ করে, রাইটার্স ইউনিয়নের সভাপতি—কাদারের লেখকজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। কাদারে লেখক, সাংবাদিক এবং সাপ্তাহিক ‘দৃতা’ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদনাকে পেশা হিসেবে নিয়ে কাজ শুরু করলেন 
১৯৬২ সালে, কাদারের ‘কফিহাউজ ডেইজ’ নামক গল্পটি প্রকাশের পরপরই নিষিদ্ধ হলো। অভিযোগ উঠল, কাদারে স্রেফ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে সাহিত্য করছে। অভিযোগকে নস্যাৎ করতে তিনি এরপর ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত প্রকাশ করলেন, ‘হোয়াট আর দ্য মাউন্টেইনস থিংকিং এবাউট?’ শিরোনামে কবিতার সিরিজ। দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদকে রোমান্টিসাইজ করা কবিতাটি হোজ্জার সমাজতান্ত্রিক নতুন আলবেনিয়ার স্বপ্নকে যেন পূর্ণতা দিলো।
গল্পের ছলে নিজের চিন্তা ও মতামতকে বড় পরিসরে, অধিক মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ বিধায় তিনি উপন্যাস রচনায় আগ্রহী হলেন। ১৯৬৩ সালে প্রথম উপন্যাস ‘দ্য জেনারেল অব দ্য ডেড আর্মি’ প্রকাশের পর দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপকভাবে পরিচিতি ও প্রশংসা পান কাদারে। ১৯৭৭ সালের মধ্যে বইটি বিশের অধিক ভাষায় অনূদিত হয়। সত্তরের দশকে অনূদিত সবচেয়ে সফল বই হিসেবে সংবাদমাধ্যম জয়ধ্বনি করে। ১৯৬৫ সালে, কাদারের ‘দ্য মনস্টার’ উপন্যাস প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নিষিদ্ধ হলো, শাস্তি হিসেবে কাদারেকে পাঠানো হলো দুই বছরের সশ্রম নির্বাসনে—দেশের দক্ষিণ প্রান্তে, ‘বেরাত’ নামক গাঁয়ে। চাষা ও খেটে খাওয়া মানুষের সাথে বাস করে ও কাজ করে বাস্তবতা শেখানোর হোজ্জা-পদ্ধতি। তুলনামূলকভাবে, শাস্তি হিসেবে এটা নিতান্তই মামুলি, তবে ধমকটা পরিষ্কার, ‘সরকারের দোষ-ত্রুটি ভাবা বাদ দাও!’
দেশের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠতে থাকলে ১৯৯০ সালে কাদারে দেশ ছেড়ে প্যারিসে চলে আসতে বাধ্য হন।  কাদারে ২০০৫ সালে প্রথম ম্যান বুকার পুরষ্কার পান এবং বহুবার তিনি সাহিত্যে নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তাঁকে ফরাসী একাডেমী সদস্যপদ প্রদান করেন এবং ফরাসী সরকার লেজিয়ন অব অনার করেন। জীবনের শেষ বছরগুলো প্যারিসে কাটিয়েছেন, মাঝে মাঝে স্বদেশ আলবেনিয়ায় যেতেন। ০১ জুলাই ২০২৪ স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ৮৮ বছর বয়সে আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন বিশ্বনন্দিত এই লেখক।
রবার্ট উইলটন’র  ইংরেজি অনুবাদ থেকে প্রিয় কবি ইসমাইল কাদারে’র ১০টি পছন্দের কবিতার ভাষান্তর পাঠকের সদয় বিবেচনার নিমিত্তে প্রকাশিত হলো।]

স্ফটিক

দেখা হয়নি বহুদিন
মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে ভুলে যাচ্ছি তোমাকে
যেন স্মৃতিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছ
যেমন চুল ঝরে যায়, সবকিছুই ফুরিয়ে যায়।

তাই তোমকে ছেড়ে যাওয়ার
একটি কারণ খোঁজা প্রয়োজন, ভিষণভাবে খুঁজছি
একটি কবিতা, শেষচিঠি, দামি কোন উপহার
যেখানে তোমাকে শেষ চুম্বনে বিদায় জানাব, তারপর চলে যাব।

যদি কোন সমাধি তোমাকে গ্রহন না করে
মার্বেল অথবা স্ফটিকের শয্যায়
তবে, অর্ধ-জীবিত অথবা অর্ধ-মৃত তোমাকে
চিরদিন বয়ে বেড়াতে হবে না নিশ্চয়?

যদি কোনও নির্জন গহ্বর খুঁজে পাওয়া না যায়
ফুল ও বৃক্ষে সুরভিত মাঠ খুঁজে নেব
আলতোভাবে তোমাকে ছড়িয়ে দেব
ফুলের পাপড়িতে ছড়িয়ে থাকা পরাগের মতো।

হয়তো এভাবেই অনন্ত শয্যয় ঘুম পাড়িয়ে দেব, চুম্বন করব
এবং আর কখনও ফিরব না সেই স্মৃতির কাছে;
অন্য কেউ এমনকি আমরাও কখনো জানবো না
সত্যিই এ বিদায় ভুলে যাওয়া ছিল, নাকি ছিল না।

দে রাদা

ম্যাকিয়ার সমুদ্রের দিকে ফিরে তাকায়, দিগন্তরেখায়
গোধূলীর আকাশ জ্বলে ওঠে এক অদ্ভুত শিখায় ।

ভেড়ার পালে পরিপূর্ণ সড়কের প্রতিটি কোন,
কবি শুনতে পান হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন।

আশা-নিরাশার প্রতিটি পঙ্‌ক্তির ভাঁজে ভাঁজে,
তাঁর হৃদয় যেন ঝুলে থাকা ঘণ্টার মতো বাজে।

শব্দেরা দলবেঁধে ফিরে যাচ্ছে প্রাচীন কোন সময়
সেই সুরে জেগে উঠছে কোন প্রত্ন লোকালয়।

এই ব্যথায় ভারাক্রান্ত বিস্ময়কর মানুষের দল
যেন শেষ অভিযাত্রা খুঁজে পেল প্রপিতামহের উপকূল।

* আর্বেরেশ কবি জেরোনিম দে রাদা (১৮১৪ – ১৯০৩), আলবেনীয় সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তিনি ইতালির দক্ষিণে কোসেনজা অঞ্চলের ম্যাকিয়া আলবেনিজে শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

ভি-র প্রতি নিবেদিত

তোমার নামের এই প্রথম অক্ষর—
আমি লিখেছিলাম, পৃষ্ঠার উপরে ডান পাশে।
যেন একটি বুনোহাঁসের ঝাঁক
ভি-আকৃতিতে উড়ে যাচ্ছে দূরে ফিকে শরতের কুয়াশায়।

তুমি চিরতরে চলে যাচ্ছো আরো দূরে
আমাকে ছেড়ে, লোকালয় ছেড়ে, মৃদুশব্দে
আমি যখন ফিরে তাকালাম,
সে আকাশ শূন্য ছিল
আর সেই ফিকে স্থানটিও ছিল শূন্য।

আমার স্মৃতি

এমনকি যখন আমার অবসন্ন স্মৃতিরা—
রাতের শেষ ট্রামের মতো—
শুধু বড় বড় স্টেশনগুলোতেই থামে,
তখনও আমি তোমাকে ভুলব না।

আমি কখনো ভুলবোনা
সেই নির্জন সন্ধ্যা, তোমার দৃষ্টির অসীম শূন্যতা,
কান্নার দমকে ঝরে পড়া জমাট অশ্রু ,
যেন তুষারের মতো কাঁধে চেপে আছে ।

তারপর বিচ্ছেদ:
দু’জন চলে গেছি দূর বহুদূরে…
অথচ যেন সবকিছু স্বাভাবিক,
শুধু সেই রাত ছাড়া
কারো আঙুল তোমার চুলের ভাঁজে ঢেউ তুলবে,
যোজন যোজন দূর হতে, যেন আমারই আঙুলে…।

শীত

শরৎ চলে গেছে, দমকা হাওয়া বইছে
গাছপালাকে ঝাঁকিয়ে পরিস্কার করে দিচ্ছে।
শীত যেন এক চীনা সম্রাট,
দিকেদিকে হলুদের ফরমান জারি করল।

এখন যে মেঘেরা উড়ে যাচ্ছে,
এরা অন্যরকম, আগের মতো নয়,
বজ্রপাতহীন, নিষ্প্রভ, দুর্বল,
যেন বিরানভূমির মতো নির্জন।

কিন্তু এই মেঘের আড়ালে নগরী ফুটছে
আলো, কোলাহল এবং ব্যস্ত সড়কে।
আর কলকারখানার ধোঁয়ার কুন্ডুলি
ঐশ্বর্য্যের মতো ঝুলে পড়ছে কাঁধে।

এখন শীতের আদিগন্ত সাদা
নিষ্প্রাণ সমতল জুড়ে,
তার শেষ আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে দিচ্ছে,
যেন আলোকচিত্রীর শেষ আলোর ঝলক ।

ওক গাছ

(একটি গীতিকব্য)

একটি প্রাচীন ওক গাছের গুড়িতে
চিঠি রেখে আসতাম, আমি আর তুমি।
ওক গাছটি অনেক পুরাতন ছিল,
কিন্তু আমাদের আবেগ, একেবারে নতুন।

সেই উন্মুক্ত প্রান্তরে
ছিল তার নিঃসঙ্গ সিংহাসন।
আর আমাদের অনুরাগের কথাগুলো
শুধু তারই জানা ছিল।

কিন্তু তারপর এক শীতের সন্ধ্যায়
কোনো প্রেমপত্র রেখে গেলে না তুমি।
সেই রাতেই এক বজ্রপাতের আঘাতে
শেষ হয়ে গেল সেই পুরাতন ওক গাছটি।

যখন তুমি ফোন করলে

(হেলেনার উদ্দেশ্যে)

টেলিফোনটির ঘুম ভাঙালে, গহীন অন্ধকার থেকে,
তোমার প্রিয় কণ্ঠস্বরের উষ্ণ অনুরণনে,
তখন শীতকাল ছিল,
আমি নিমজ্জিত ছিলাম আর্মচেয়ারে
স্থির, একাকীত্বের মুখোমুখি ।

জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম,
তখন বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল।
প্রসন্ন মনে টেলিফোনের লম্বা তারগুলোর দিকে তাকালাম,
দূর হতে আসছিল তারা, কোথাও না থেমে, সরাসরি তোমার কাছ থেকে,
তোমার চুলের ঘ্রাণ থেকে, তোমার ঠোঁটের নিখুঁত রেখা থেকে,
বিরামহীন, ঠিকপথে, রংধনুর মোহ-মায়ায় না ভুলে

তুমি কি কাঁদছিলে?
না। তার বেয়ে উষ্ণ বৃষ্টির ফোঁটা ঝরছিল।।

তুমিহীনা

তুমি সেই অনন্ত পথে হারিয়ে গেছ
যেখানে মলিন উইলো গাছেরা নুয়ে পড়ে,
হ্রদের বুকে শান্ত ঢেউয়ে দোল খায়
সোনালি পদকের মতো চাঁদ।

সারসেরা উড়ে গেছে। যেখানে তুমি দাঁড়িয়ে ছিল একদিন
জীর্ণশীর্ণ তুলার মতো ম্লান হয়ে আসছে চিরসবুজ,
কাঠ, মাটি ও মেঘের আবরণ—
পড়ে আছে উল্টো প্রতিবিম্বে মতো, বিস্মৃত।

আর এখন বিরান প্রান্তর আমাকে ডাকছে,
শীতল বাতাসে স্মৃতিরা ভেসে বেড়াচ্ছে,
একটি আধখাওয়া খড়ের গাদা, পড়ে আছে দূরে
মনে হয় যেন পড়ে আছে বীর ‘ডন কিহোতে’।

দিশেহারা নিজের সাথেই আমি শোক করি নিজে—
এই গোধূলির ক্ষণে হারিয়েছিলে তুমি ,
যখন পৃথিবীর বুকে জাল বুনছিল গাড়ির চাকা
গজন বুজুকু’র আদি লিপির প্রথম রেখাগুলো মতো।

আমি হাঁটু গেড়ে বসে জলের কিনারে,
হ্রদে ছুড়ে ফেলেছি তৃষ্ণার জল।
মনে হয় যেন কণ্ঠে বিঁধে আছে
বরফশীতল পদকের মতো চাঁদ।

*ক্যাথলিক পুরোহিত গজন বুজুকু (১৪৯৯-১৫৭৭) আলবেনীয় ভাষায় প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ রচনা করেন; তার মিসাল/উপাসনাগ্রন্থ আলবেনীয় সাহিত্যের একটি ভিত্তিপ্রস্তর এবং ভাষার বিবর্তন বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

আমরা অপরিচিত

আমরা দীর্ঘ দিন ধরে অপরিচিতের মতো,
যাকে বলতে পারো,
বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পথরখন্ড,
জীবনেও একে অন্যের স্থান দখল করে রেখেছি।

একে-অপরের দিকে সকল পথ
সব রাস্তা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি,
যেভাবে দুটি মধ্যযুগীয় শহর
বন্ধি থাকে প্রাচীরে, বর্শা ও হাতকড়ায়।

কিন্তু রাতে, যখন চিন্তারা অবসন্ন,
আমি ধীরস্থিরভাবে দরোজাগুলো বন্ধ করি,
তুমি একটি পথ খুঁজে পেয়ে ভিতরে ঢুকে যাও,
একটি পথ যা কেবল তুমি চেনো।

অতঃপর যেন পার্কের গলি,
সার্কাসের আলাদা আলাদা প্যান্ডেল,
একেকটি অসতর্ক স্বপ্নের ভেতর ঢুকে পড়ো,
হাতে হাত ধরে মজা করো, হাঁসো।
কিন্তু আকাশে ভোরের আলো দেখা দিলে,
তুমি হঠাৎ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠো,

আর ধীরে ধীরে বাইরে চলে যাও
যে পথে তোমার ঠিকানা
দিনের আলো ফুটছে। জীবন আবার চলতে শুরু করবে।
এবং আমরা দু’জন আগের মতো
বরফশীতল এবং অনড়
যেন দুটি মধ্যযুগীয় শহর।

সময় অপ্রতুল

আমার অনেক কিছুই ভুলে যাওয়ার সময় নাই,
তুমি যা তোমার মন থেকে চিরতরে মুছে ফেলতে পার।
পুরনো দুঃখভারাক্রান্ত  স্মৃতির আতশবাজি
ভুলে যেতে আমার অন্তত দু’বছর সময় লাগবে।

আর দান্তের জন্যও হয়তো ঠিক ততটাই,
ফরাসি ভাষার সাথে সমুদ্র সৈকতের মতো,
হয়তো নারীরা মুছে ফেলবে আমাকে হৃদয় থেকে
যখন গোধূলির অন্ধকার নেমে আসবে।

যেন অতিরিক্ত বোঝা বহনকারী যাত্রী,
বিমান ছাড়ার প্রতিক্ষায়,
অনেক ভারী মাশুল গুনতে হবে
তবুও সে পৌঁছাবে পরাজিতের সমাধিতে।

কীভাবে এই বোঝা কাঁধ থেকে সরাবো?
এই ভার কোথায় রাখব, কীভাবে?
আমি তার সাথে নিচে যেতে পারি না,
কিন্তু সে উপরেও রেখে যেতে পারে না।

শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভাবি,
রক্তাক্ত শোকাবহ শেষ প্রতিজ্ঞা থেকে,
একটি দুর্বোধ্য চিহ্নের মতো
সকলের জন্য রেখে যাবো, তারপর চলে যাবো।

০টি মন্তব্য

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর প্রকাশ করা হবে না। * চিহ্নিত ঘরগুলো অবশ্যই পুরণ করতে হবে।