কথা বলো ভাই, কেউ না শুনলে না শুনোক
কেউ না বললে না বলুক মনের কথাগুলো
কথা বল শব্দ ধরে ধরে।

কথা শুধু ঢাকি বলবে নাকি!
কথা বলবে কি শুধুমাত্র পাখি?
শূকরেরও এতো কথা জল কাদায় মাখামাখি
তোমার কথা শুনতে না পেয়ে জঙ্গল জেগেছে ঘরে।

এখানে কথা হয়না, এমন কথাও নয়
কথার পিঠে মালিকবিহীন সারি সারি কথা, তারপর
আমাদের সাথিরা কথা বলে, রাতের অন্ধকার কথা বলে
ভাতের হাড়ি কথা বলে, কথা বলে ভগবান
বাঘ হাতির বড় বড় কথা- মারমার ধরধর,
কথা বলে খাঁচার ময়না, কচুপাতা
হাওয়ায় চুলকানির আরাম অভিমান।

তুমি কেন কথা না বলে জঙ্গল কাটছো ভাই?
তোমার কথা শুনতে না পেলে জঙ্গল গজাবেই ঘরে
কথা বলো, তোমর কথাই আমার কথা
আমার আর কথা বলতে ভাল লাগেনা।

ঘুম

আমি এখন শব্দহীন ঘুমের ভেতর।

মায়ের স্তনে লীন শিশুর মতো
অথবা
প্রেমিকার চুলের আড়ালে এক
শ্রান্ত ক্লান্ত মুখ, অথবা
আকাশ এবং নীল রং যেরকম লেপ্টে থাকে
ঘুমের সাথে আমিও।
আসলে ঠিক এরকমও নয়
ঘুমের সাথে আমার ভাব বিষয় গুলো
উদাহরণ দিয়ে বলতে বড় খাপছাড়া লাগে
এখানে আমাদের রক্ত এবং উদাসীনতার মতো
ঘুম এবং আমি এক হৃদপিণ্ডে লালে লাল।
আমাদের শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান সেয়ান লোকেরা
পার্টির পিঞ্জরে ঢুকে ‘কৃষ্ণ কথা কও’ সুর করে বলে;
আমার শব্দের অনেকাংশে ঘুমের সুর বাজে এরকমই।
মন্ত্রীদের মাথায় ক্ষমতা, সম্পদের লোভ এবং অহংকার
যেরকম চেপে বসে থাকে, সেরকম আমাকে রাজা সাজিয়ে
ঘুম আমার মাথায় বসে আছে যেন সোনার মুকুট
আমি পাহাড়ের পথ ধরে হাঁটি
পথের দু’ধার ঠেলে জঙ্গল নুয়ে রয়েছে
জঙ্গল মাড়িয়ে দৌড়ে যায় উগ্রবাদী
জঙ্গল মাড়িয়ে দৌড়ে যায় সেপাই সান্ত্রীর উগ্র দাপট
পাহাড়ী এই পথ ধরে শ্মশানে যাচ্ছে মৃতদেহগুলো।
এই মৃতমুখটি অতি চেনা মনে হলো!
লালপাতা দিয়ে জংলাব্যাঙের সেদ্ধ খেয়েছে কুতুংলার বউ, মরেছে।
আন্ত্রিক নাকি আমাশয়ে ওয়াতুইরায় গেল
উগ্রবাদীদের মার খেয়ে মরেছে অমুক
পুলিশের গুলিতে মারা পড়েছে তমুকের ছেলে
উগ্রবাদী আর পুলিশের গোলাগুলির মাঝখানে
বেঘোরে মরল আমাদের ব্যাংকের এক মুখর কাস্টমার
কিছুদিন আগে বিয়ে করেছিল বেচারা
দেখা হলেই বলতো- স্যার, কই যান?
আমি প্রথম প্রথম তার কথায় সাড়া দিয়েছি
তারপর দেখা হলেও চলে যেতাম চুপচাপ।
আমি কোথায় যাই বলব কেন?
আমি কোথায় যাই তার কতটুকু আমি জানি?
আমি সত্যিই কি যাচ্ছি নাকি মাথায় বসানো
মুকুটের আলোয় ভাসিয়ে দিচ্ছি পথ
সবকিছু জানে আমার ঘুম।
ঘুম আমার জীবন।

আমার এই ঘুম বাবার পছন্দ নয়
আমার মা বিরক্ত হন, স্ত্রী রেগে যান
তবু কেউ কেউ ঘুম এবং আমাকে চুপিসারে তাকিয়ে
সামাজিক উৎসবে নিবিড় চলে যায়
মোরগের যুদ্ধ দেখিয়ে পয়সা কামায়
নক্ষত্রের পাশে বসে হাসে একগাল,
এদিকে ঘুম আমার বুকে শুয়ে
আমাকে আদর করে, চুমু খায়
চুড়ান্ত পাগলামীতে চোখ মুখ লাল।

বৃষ্টি

আজ সারারাত বৃষ্টির সাথে কথা বলেছি
কিশোর খেজুর পাতার আড়ালে বৃষ্টিতে
শুকনো কথাগুলো গলে ছলোচ্ছল
          চিক্‌ চিক্‌ করে জ্যোৎস্নায়
এই অন্ধকারে কখন চাঁদ উঠেছে!

জানি,
বৃষ্টি চলে যাবে তার ঠিকানায়
মেঘের ভিতর থেকে বাইরে চলে আসবে সূর্য
          জ্বরে পুড়ে যাবে
             শরীর মন জীবন।
মুখে রুচি থাকবেনা
অভিমানে গলা ভাঙবে স্ত্রী
বাতাসে ছড়িয়ে যাবে গুঞ্জন-
পুরানো কপালে কবিতা লিখছে বৃষ্টি!

বৃষ্টিতে ভিজেছে টংঘরটি
পরিত্যক্ত জুমে সারারাত।
পচে গলে ধসে পড়ছে পাহাড়
কেউ দেখেনি
খুসপুই ফুলের বন জলে ডুবে আছে।

৫ বর্ষ. ৭ সংখ্যা. ফাল্গুন ১৪১০. ফেব্রুয়ারি ২০০৪

০টি মন্তব্য

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর প্রকাশ করা হবে না। * চিহ্নিত ঘরগুলো অবশ্যই পুরণ করতে হবে।